November 23, 2024, 8:06 am
বিপ্লবী ডেস্ক ॥ দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পরেও ঢাকা থেকে ৫ ঘণ্টায় পটুয়াখালী আসছে দূর পাল্লার বাস গুলো। যার ফলে অনেকটা প্রভাব ফেলেছিল পটুয়াখালী-ঢাকা নৌরুটের লঞ্চগুলোতে। এ কারণে এসব রুটে লঞ্চের ভাড়া কমে যায়। ফলে কমেছিল লঞ্চ চলাচলও। কিন্তু সোমবার থেকে ফের ভাড়া বৃদ্ধি করেছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।
হঠাৎ করে ভাড়া বৃদ্ধি করায় পটুয়াখালী-ঢাকা নৌরুটের সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পটুয়াখালী-ঢাকা নৌরুটে বর্তমানে মোট ১০টি লঞ্চ রোটেশন পদ্ধতিতে চলাচল করে এবং প্রতিদিন দুটি করে লঞ্চ ঢাকা এবং পটুয়াখালী থেকে ছাড়ে। তবে পদ্মাসেতু চালু হওয়ার আগে এবং চালুর তৃতীয় দিন পর্যন্ত চারটি লঞ্চ চলাচল করত তবে তা হঠাৎ করেই দুটি লঞ্চ কমিয়ে দেওয়া হয় এ রুটে।
এসব চলাচলকারী এসব লঞ্চগুলো হচ্ছে এমভি সুন্দরবন-১৪, এমভি সুন্দরবন-৯, এমভি এ. আর খান-১, এমভি কুয়াকাটা-১, এমভি কাজল-৭, এমভি প্রিন্স আওলাদ-৭, এমভি জামাল-৫, এমভি কামাল খান-১, এমভি পুবালী-১২ ও এমভি সত্তার খান। এদিকে গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন স্বপ্নের পদ্মাসেতু। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পরের দিন যানবাহন চলাচল শুরু করে।
পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে মাত্র ৫ ঘণ্টায় পটুয়াখালী পৌঁছে যাত্রীবাহী পরিবহনগুলো। ঢাকা থেকে সকালে নাশতা করে বাসে ওঠে পটুয়াখালী পৌঁছে দুপুরের খাবার বাসায় খেতে পারছেন। এতে যাত্রীরা ভীষণ উচ্ছ্বসিত হয় এবং তারা নৌপথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
এতে পটুয়াখালী-ঢাকা নৌরুটের লঞ্চে যাত্রী কমে যাওয়ার আশঙ্কায় পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক সপ্তাহ পূর্বে ভাড়া কমিয়ে দেয় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। প্রথম শ্রেণির ডবল কেবিন ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে কমিয়ে ২ হাজার ২০০ টাকা করা হয় এবং সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়।
এতে যাত্রীরা সন্তোষও প্রকাশ করে সড়ক পথের পরিবর্তে নৌপথে আরামদায়ক ভ্রমণেই ইচ্ছে পোষণ করেন। কিন্তু পদ্মা সেতুতে যাত্রীর চাপ কমে যাওয়া সত্ত্বেও জুলাই থেকে ফের ভাড়া বৃদ্ধি করে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এমভি প্রিন্স আওলাদ-৭ এবং এমভি সুন্দরবন-১৪ লঞ্চ পূর্বের ভাড়া বহাল রেখে ডবল কেবিন ২ হাজার ৮০০ টাকা এবং সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ৫০০ টাকা ধার্য করা হয়।
অপরদিকে এমভি সাত্তার খান লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ডবল কেবিন ২ হাজার ৪০০ টাকা এবং সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ২০০ টাকা ধার্য করে। এ ছাড়া বাকি অন্যান্য লঞ্চগুলো সিঙ্গেল কেবিনে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৩০০ টাকা এবং ডাবল কেবিনে ৩০০ টাকা বাড়িয়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা ধার্য করেছে। তবে, ডেকের ভাড়া ৪০০ টাকা থাকলে অনেক লঞ্চে যাত্রী কম থাকায় ২০০ টাকা করে নিতেন।
বর্তমানে আগের ৪০০ টাকাই বহাল রেখেছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। পদ্মা সেতুর কারণে লঞ্চ ভাড়া কমিয়ে ১৫ দিনের মাথায় ফের বৃদ্ধি করায় ক্ষুব্ধ হয়েছে যাত্রীরা। পটুয়াখালী থেকে ঢাকাগামী যাত্রী রেখা আক্তার বলেন, ‘হঠাৎ জরুরি কাজে আমার শাশুড়িকে নিয়ে ঢাকা যেতে হবে চাচ্ছিলাম বাসে যাব, কিন্তু শাশুড়ি বয়স্ক মানুষ বাসে যেতে পারবে না তাই লঞ্চে যাব।
ডাবল কেবিনের জন্য ফোন করলাম বলল ২৮০০ টাকা ভাড়া, এ কেমন অবস্থা কিছুদিন আগেও যে ভাড়া ছিল ২০০০ টাকা এখন ৮০০ টাকা বাড়িয়ে নেবে কেন। এটা অমানবিক যাত্রীদের সাথে জোর জুলুম করা হচ্ছে। এ রকম ভাড়া বাড়ালে আর লঞ্চে যাওয়া যাবে না।
লঞ্চের যাত্রী জাকারিয়া নোমান বলেন, ‘একটু আরামের জন্য লঞ্চে চলাচল করি। কিন্তু লঞ্চ কর্তৃপক্ষ যদি সুযোগে অসৎ ব্যবহার করে তাহলে লঞ্চের যাতায়াত করা বন্ধ করতে হবে। পদ্মা সেতু দিয়ে বাসে আসব ৭০০ টাকায় লঞ্চে ১৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে আসার প্রশ্নই আসে না।
এটা তো মগের মুল্লুক না। এ প্রসঙ্গে এমভি কুয়াকাটা-১ লঞ্চের পটুয়াখালীর বুকিং ইনচার্জ মো. সুমন মৃধা বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ আগে লঞ্চের যে ভাড়া কমানো হয়েছিল তা মালিক সমতির সিদ্ধান্তে করা হয়নি। আমরা বুকিং ইনচার্জ ও লঞ্চ স্টাফরা মিলে এটা করেছিলাম।
বিষয়টি মালিক পক্ষ অবগত ছিলেন। এখন মালিক পক্ষের সিদ্ধান্তে পূর্বের ভাড়াই ধার্য করা হয়েছে। দুটি লঞ্চ বাদে সব লঞ্চেই ডবল কেবিন ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ৩০০ টাকা করা হয়েছে। কোরবানি ঈদের পর ভাড়া কমবে কি-না তা এখনই বলা যাচ্ছে না। পদ্মা সেতুর প্রভাব আছে ঠিকই, তবে লঞ্চের যাত্রীর ক্ষেত্রে খুব বড় ধরনের প্রভাব পড়েনি।
মূলত ঈদ ও কোরবানির আগে পটুয়াখালী থেকে ঢাকাগামী যাত্রী পদ্মা সেতুর আগেও এ রকম কম থাকত। তবে, ঢাকা থেকে যাত্রীর চাপ রয়েছে। পদ্মা সেতুর প্রভাব খুব বেশি দিন থাকবে না। সবার একবার দেখা হয়ে গেলে সেই সব যাত্রীরা ফের লঞ্চেই আরামদায়ক যাতায়াত করবেন আমাদের বিশ্বাস।
এমভি আওলাদ-৭ লঞ্চের পটুয়াখালীর বুকিং ইনচার্জ মো. আব্দুল আজিজ মিয়া বলেন, ‘আমাদের লঞ্চসহ আরও কয়েকটি লঞ্চের ভাড়া ডবল কেবিন ২ হাজার ৮০০ টাকা এবং সিঙ্গেল ১ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। এসব লঞ্চের গুণগত মান ভালো থাকায় অন্যান্য লঞ্চের চেয়ে আমাদের লঞ্চের ভাড়া একটু বেশিই। কোরবানি ঈদের পর কি হবে সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী নদী বন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক মো. মামুন অর রশিদ বলেন, ‘কোরবানির ঈদ উপলক্ষে লঞ্চের বিশেষ সার্ভিস না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। দৈনিক যেসব লঞ্চ সার্ভিস আছে তাতেই তো যাত্রীর চাপ নেই। সেখানে লঞ্চের বিশেষ সার্ভিস চালু করে কি লাভ।
পটুয়াখালী-ঢাকা নৌরুটে সরকারি ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। সরকারের নির্ধারিত এ ভাড়ার মধ্যে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ বাড়াতেও পারেন এবং কমাতেও পারেন। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর অনুমতি নেওয়া কিংবা অবহিত করার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা নেই।
Leave a Reply